HighlightNewsদেশ

কেন্দ্রের নয়াকৃষি বিলের প্রতিবাদে এখনো পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ জন কৃষক; দাবি কৃষক সংগঠনের সদস্যদের

দেবিকা মজুমদার,টিডিএন বাংলা: লোকসভায় কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইন পাস হওয়ার পর থেকেই লাগাতার বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষক সংগঠনের সদস্যরা। কেন্দ্রের নয়াকৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বিগত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন চলাকালীন এখনো পর্যন্ত মারা গিয়েছেন মোট ৪১ জন কৃষক। গতকাল আন্দোলন চলাকালীন মৃত শহীদ কৃষক সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এমনটাই দাবি করেছেন কৃষক সংগঠনের সদস্যরা।

রবিবার কৃষক সংগঠনের সদস্যদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাঞ্জাবের ৯৮ টি গ্রামের কৃষকদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন আন্দোলনরত কৃষকরা। কৃষক সংগঠনের সদস্যদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এভাবেই পাঞ্জাবের ১৫ টি জেলায় মৃতদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হবে।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের কৃষি আইন পাস হওয়ার পরেই প্রথম মৃত্যু হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদলের বাড়ির সামনে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালীন বেশ কয়েকটি সালফার ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন আখনবালীর মনসা গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী প্রীতম সিংহ। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচিয়ে ফেরানো সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রের নয়াকৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে চলতে থাকা ওই বিক্ষোভে শামিল ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর ছেলেকে সরকারি চাকরি এবং তাঁর পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ঋণ মুকুবের আশ্বাস দেওয়া হয়।

বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রের কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে এখনো পর্যন্ত পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় ৪১ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে মালবা অঞ্চলের ৩০ জন, ডোয়াবা অঞ্চলের ৬ জন, মাঝা অঞ্চলের দুজন এবং হরিয়ানার তিন জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত সেভাবে কোন নিশ্চিত তালিকা পাওয়া যায়নি যে কতজন দিল্লি সীমান্তে আন্দোলন চলাকালীন মারা গেছেন কিংবা দিল্লি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। তবে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২৬ নভেম্বরের পর থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে বা দিল্লি থেকে ফেরার পথে বা দিল্লি সীমান্তে আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় ২৬ জনের বেশি কৃষক এবং কৃষক পরিবারের সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতদের এই তালিকার মধ্যে রয়েছেন দুজন মহিলাও। একজনের নাম তেজ কৌর বয়স আশি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ ডিসেম্বর ঘটনাচক্রে তিনি রেললাইনের ওপর পড়ে যান এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। অপর জন হলেন গুরমেল কৌর। ভাটিণ্ডায় আন্দোলন চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।

২৬ নভেম্বর থেকে কৃষকরা যে “দিল্লি চলো” আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাতে প্রথম মৃত্যু হয় ২৭ নভেম্বর। মারা যান ৪৫ বছর বয়সী ধনা সিং।একটি ট্রাক্টর-ট্রলিতে করে যাওয়ার সময় পেছন থেকে একটি ট্রাক এসে ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ধনা সিংয়ের। বিকার সিং নামে তাঁর এক সঙ্গী জানান, ওই ট্রাক্টরটি চালাচ্ছিলেন বলজিন্দর সিং নামে বছর কুড়ির এক চালক। ধনা এবং গোরা সিং তার দুই পাশে বসেছিলেন। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন গ্রামবাসী ওই ট্রলিতে করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে একটি ট্রাক পেছন থেকে এসে ওই ট্রাক্টরে ধাক্কা মারে। আচমকা ঐ ধাক্কায় ধারে বসে থাকা ধনা সিং রাস্তায় পড়ে যান এবং ট্রাকের চাকায় পিষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ট্রাক্টর ধারে বসে থাকা অপর দুই সঙ্গীর ধাক্কার প্রাবল্যে রাস্তায় পড়ে যান তবে, তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের ভিওয়ানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ধনা সিং-এর মৃত্যুর পর কুড়ি লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, ঋণ মুক্তি এবং ধনা সিং-এর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সরকারি চাকরির দাবি নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হাইওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় ধনা সিং-এর পরিবারকে।

ধনা সিং-এর পরে মারা যান আরো অনেকেই। পাঞ্জাবের লালিয়ানা গ্রামের বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী লখবীর সিং দিল্লি সীমান্তে আন্দোলন চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, লখবীর সিং অন্যান্য আন্দোলনরত কৃষকদের সাথে ২ নভেম্বর বিক্ষোভ স্থলে পৌঁছেছিলেন।

এছাড়াও দিল্লি থেকেফেরার সময় এবং দিল্লির অভিমুখে যাওয়ার সময় মৃত্যু হয়েছে আরো অনেকের। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বরজিন্দর সিং। দিল্লি থেকে ফেরার সময় মৃত্যু হয় তাঁর। এর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কৃষক গজন সিং। মনসার গুজরন্ত সিং এবং মোদার গুরবচন সিংহও আন্দোলন চলাকালীন প্রাণ হারিয়েছেন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং গুজরন্ত সিং এবং গুরবচন সিংহের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেছেন।

 

গত সপ্তাহের শনিবারও কৃষক আন্দোলনের জেরে মৃত্যু হয়েছে ২২ বছর বয়সি পাঞ্জাবের এক কৃষক গুরলভ সিংহের। যদিও পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, দিল্লির সিংহ সীমান্ত থেকে ফেরার পরে ভাটিণ্ডার দয়ালপুর মির্জা গ্রামের ওই কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছে, শুক্রবার সিংঘু সীমান্ত থেকে ফেরার পর শনিবার নিজের বাড়িতেই কিছু বিষাক্ত পদার্থ খেয়ে আত্মঘাতী হন ওই কৃষক। তাকে তড়িঘড়ি নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। জানা গেছে, ওই কৃষকের ওপর প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা ছিল। তবে ঠিক কি কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি।

Related Articles

Back to top button
error: